আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে অনুষ্ঠেয় গণসমাবেশে সবাইকে শরিক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) রাতে গুলশানে বিএনপির চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন।
খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, শনিবার বেলা ১১টায় গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ শুরু হবে। সমাবেশ সফল করতে দলের নেতাকর্মী ও সাধারণ জনগণ ও যুগপৎ আন্দোলনের বিষয়ে যারা একমত হয়েছিলেন তাদের শরিক হওয়ার জন্য আহ্বান করছি।
তিনি বলেন, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে দলীয় কার্যালয়ের সামনে নয়াপল্টন সড়কে ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের সম্মতি চেয়ে লিখিত চিঠি দেওয়া সত্ত্বেও তা নিয়ে সরকার গড়িমসি করে। আমরা না চাওয়া সত্ত্বেও অযাচিত ও স্বপ্রণোদিত হয়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ২৬ শর্তে গণসমাবেশের সম্মতি দেয় পুলিশ। তা প্রত্যাখ্যান করে বিএনপি আলোচনার মাধ্যমে তৃতীয় কোনো উপযুক্ত স্থানে সমাবেশ করার অনুমতি চায়। তাতেও গড়িমসি করা হয়।আজ দুপুরে আমাদের একটি প্রতিনিধিদল ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার বরাবর রাজধানীর সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের কাছে গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশ করার জন্য চিঠি দেয়। আমাদের চাহিদা মোতাবেক গোলাপবাগ মাঠে গণসমাবেশের অনুমতি দিয়েছে পুলিশ। এত গরিমসি করে এ গোলাপবাগ মাঠ দেওয়া হয়েছে এর একটিই উদ্দেশ্য হচ্ছে যাতে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশে সবার অংশগ্রহণ সুনিশ্চিত করতে না পারি। সেজন্যই ভেন্যু নিয়ে এত লুকোচুরি….।
বিএনপির এ নেতা বলেন, বিএনপি নেতাকর্মী, জনগণ ও ভবিষ্যতে যুগপৎ আন্দোলনে যেসব দল, ব্যক্তি সহযোগিতা করবেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই— শনিবার গোলাপবাগ মাঠে ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ সকাল ১১টা থেকে শুরু করবো। আমরা আমাদের সব নেতাকর্মী, সমর্থক, এবং অন্যান্য দল যারা ভবিষ্যতে আমাদের সঙ্গে যুগপৎ আন্দোলন করবেন তাদের সবাইকে এ ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে আহ্বান জানাতে চাই শনিবারের শান্তিপূর্ণ সমাবেশ সফল করার জন্য সবাই উপস্থিত হবেন।
‘বিশেষ করে ঢাকাবাসীকে আমার আবেদন ঢাকার যারা জনসাধারণ আছেন, দলের নেতাকর্মী নয়, সেই সব পর্যায়ের জনসাধারণকে আহ্বান জানাচ্ছি নিজেদের মনের কথা বলার জন্য সমাবেশে উপস্থিত হোন।’
সরকার বিদায়ের দফা ঘোষণা শনিবার
১০ ডিসেম্বর সমাবেশে কী হবে এ নিয়ে অপপ্রচার করা হয়েছে মন্তব্য করে মোশারফ বলেন, বিএনপি মহাসচিব বারবার বলেছেন— যে জনগণ বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যে রায় দিয়েছে, যে মতামত ব্যক্ত করেছে…সেগুলোই আমাদের দাবি। আমাদের দাবি হলো— খালেদা জিয়ার মুক্তি, নিত্যপণ্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করা, লোডশেডিং কন্ট্রোলে আনা, ভবিষ্যতে একটি নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচন। এসব দাবিগুলোতে কিন্তু আমরা আমাদের সমাবেশগুলো করেছি।
‘শনিবার এ দাবি নিয়েই সমাবেশ হবে। যে সমাবেশ থেকে আমরা আগামীদিনের এ সরকারের বিদায়ের জন্য কতগুলো দফা ঘোষণা করবো এবং এখান থেকেই আমাদের যুগপৎ আন্দোলনের প্রস্তুত। তাদের সঙ্গে এরই মধ্যে আলোচনা হয়েছে।
মোশাররফ হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার রাত সোয়া তিনটার দিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলা আলমগীর ও ঢাকা বিভাগীয় সমাবেশের প্রধান উপদেষ্টা স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে নিজ নিজ বাসা থেকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সাদা পোশাকে নিয়ে যায়। শুক্রবার ডিবি কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। বর্তমানে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে। আমরা এ ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’
এসময় এক সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে মোশারফ বলেন, পুলিশ কমিশনার নয়, এ স্থানের জন্য আমরাই প্রস্তাব দিয়েছি। আমরা গতকাল রাতে এ প্রস্তাব দিয়েছি। পুলিশ কমিশনারকে মির্জা আব্বাস সাহেব নিজেই এ প্রস্তাব দিয়েছেন। তার সেই প্রস্তাব নিয়ে আজকে আমাদের প্রতিনিধি পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে গিয়েছিল। এর তারা আমাদের গোলাপবাগ মাঠে সমাবেশ করার অনুমতি দেয়।
অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি মহাসচিব ও গণসমাবেশের প্রধান উপদেষ্টার অনুপস্থিতিতে সমাবেশ করছি…। আমি বলবো, এ সমাবেশ এখন আর দলীয় কোনো সমাবেশ না, এটা জনগণের সমাবেশ। জনগণ এ সমাবেশকে তরান্বিত কববে। তাই আমরা কেউ থাকলাম, না থাকলাম সেটা গুরত্বপূর্ণ নয়। এখন সমাবেশটাই গুরত্বপূর্ণ। আর সরকার এতসব করছে যাতে সমাবেশ না করি, কিন্তু আমরা দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞ জনগণের এ সমাবেশ জনগণই করবে।’
এসময় সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, সেলিমা রহমান, আব্দুল মঈন খান, দলের ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল উপস্থিত ছিলেন।