গনপরিবহনে হাফ ভাড়া বাস্তবায়নের দাবিতে
সাহেবরহাট সড়কে শিক্ষার্থীদের অবস্থান কর্মসুচি
স্টাফ রিপোর্টারঃহাফ ভাড়া নিয়ে আন্দোলনটা দীর্ঘদিনের। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ারও আগের। দেশ স্বাধীন হয়েছে ৫৩ বছর, এর মধ্যে সরকার বদলেছে অনেকবার। কিন্তু শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিয়ে চূড়ান্ত কোনো আইন কিংবা সিদ্ধান্ত—কোনোটাই আসেনি। ফলে স্বাধীনতার অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলছে, যেই আন্দোলন চলছে এখনো। গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
ইতিহাসে নজর রাখা যাক। বাংলাপিডিয়ার তথ্য অনুসারে, ১৯৬৯ সালের জানুয়ারিতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের হাত ধরে আসে ১১ দফা দাবি। তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (রাশেদ খান মেনন), পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়ন (বেগম মতিয়া চৌধুরী), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) আটজন ছাত্রনেতা সম্মিলিতভাবে গঠন করেন সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ। পশ্চিম পাকিস্তানি স্বৈরাচারী শাসকদের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের ঘোষিত সেই ১১ দফা দাবির একটি ছিল শিক্ষার্থীদের জন্য অর্ধেক ভাড়া রাখা। তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালেও চলছে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া বাস্তবায়নের নানা কর্মসুচি। বরিশাল পূর্বপাড়ের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরাও নেমেছে তাদের যৌক্তিক হাফ ভাড়া’র দাবি নিয়ে। জানাগেছে বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় ছাত্র-ছাত্রী সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র নেতারা সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে প্রত্যয়নপত্র সংগ্রহ করেন। সেই প্রত্যয়নপত্র বরিশাল জেলা প্রশাসক, বরিশাল বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার, বরিশাল সদর ইউএনও, চরকাউয়া বাস মালিক সমিতি, শ্রমিক ইউনিয়ন, বন্দর থানাসহ বিভিন্ন দপ্তরে স্মারকলিপি প্রদান করেন। একপর্যায় প্রশাসনের কর্তৃপক্ষ বিষয়টি দেখার আশ্বাস দেন সাধারন শিক্ষার্থীদের। তাতেও কোন কাজ হয়নী। শুরু হয় সাধারন শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন, সড়ক অবরোধসসহ নানা কর্মসুচি। গতোকাল বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবেরহাট সড়কে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। এসময় ছাত্র নেতারা তাদের বিভিন্ন দাবির কথা তুলে ধরেন এবং তারা বলেন, পরিবহণ মালিকরা যদি শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া নিশ্চিত না করে তাহলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তুলবো। এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় ছাত্-ছাত্রী সংগ্রাম পরিষদের নেতারা। তারা বলেন, শিক্ষার্থীদের সাথে বাজে ব্যবহার বন্ধ ও হাফ ভাড়া বাস্তবায়নের দাবিতে আমরা সকাল ১০টা থেকে সাহেবেরহাট সড়ক অবরোধ করে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছি। এসময় সাহেবরহাট বাজারের সড়কে সব বাস আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। পরে হাফ ভাড়া নিশ্চিতের দাবিতে তারা সেখানে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এসময় শিক্ষার্থীরা বলেন, পরিবহন মালিকরা যদি আমাদের হাফ পাস নিশ্চিত না করে তাহলে টানা ১ সপ্তাহ সড়কে অবস্থান করবো আমরা। আগামী বৃহস্পতিবারের মধ্যে এ বিষয়ের একটি সুরাহা চান আন্দোলনরত ছাত্র নেতারা। তা না হলে লাগাতার কঠোর আন্দোলন করবো বলে হুশিয়ারি দেন। এদিকে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এ রুটে প্রতিদিন অনেক শিক্ষার্থী চলাচল করলেও তাদের থেকে হাফ ভাড়া নেয়া হচ্ছে না। উল্টো বাসচালক ও হেলপাররা শিক্ষার্থীসহ যাত্রীদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। যেখানে মানবতার মা, ৩ বার নির্বাচিত সফল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন জননেত্রী শেখ হাসিনা, আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও সড়ক পরিবহন সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সাধারন শিক্ষার্থীদের থেকে হাফ ভাড়া নিতে বলেছেন। সেখানে তাদের কথা উপেক্ষা করে সিন্ডিকেট করছেন পরিবহন মালিক, বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি। এসময় বরিশাল পূর্বাঞ্চলীয় ছাত্র ছাত্রী সংগ্রাম পরিষদের ছাত্র নেতা এম এম ইসলাম জাহিদ ও মোঃ রেদওয়ান শাওন বলেন, আমাদের হাফ ভাড়া বাস্তবায়নের জন্য আমরা সাধারন শিক্ষার্থীরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সড়ক পরিবহন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের হস্তক্ষেপ কামনা করেন। এসময় আরও উপস্তিত ছিলেন, ছাত্রনেতা এবায়দুল হক খান তুহিন, মোঃ নাঈম সর্দার, মোঃ লোকমান হোসাইন, এন আর নিশাত, মোঃ ইয়াহিয়া সজিব, তানজিল হোসেনসহ প্রমুখ। এবিষয়ে বরিশাল মেট্রোপলিটন বন্দর থানার পুলিশ জানায়, হাফ পাস ভাড়ার দাবিতে বিভিন্ন স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা সাহেবেরহাটের মূল সড়কে এসে দাঁড়ায় এবং বেশ কয়েকটি পরিবহন বাস, ট্রাকসহ নানা ধরনের যানবাহন আটকে দেন তারা। তবে পুলিশ সদস্যরা সেখানে উপস্থিত থাকায় শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে এবং শিক্ষকদের সহায়তা নিয়ে তাদের রাস্তা থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। যান চলাচল এখন স্বাভাবিক রয়েছে।