নিজস্ব প্রতিবেদক : বর্ষা মৌসুমে যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনের জন্য মাদারীপুর জেলার প্রত্যন্ত বিলাঞ্চলের মানুষের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বাহন হয়ে ওঠে নৌকা। এ অঞ্চলের বহু মানুষের মাছ শিকারের কাজেও ভূমিকা রাখে নৌকা। তাই বর্ষার শুরুতেই বেড়ে গেছে নৌকার কদর। কারিগরেরা ব্যস্ত সময় পার করছেন নৌকা তৈরিতে।
জানা যায়, এ বর্ষা মৌসুমে নৌকায় পাট জাল, চাঁই (মাছ ধরার ফাঁদ) অথবা বড়শি নিয়ে মাছ শিকারে ছুটে চলেন জেলেরা। তাই প্রতিবছর বর্ষা মৌসুম এলেই বেড়ে যায় চাঁই ও নৌকার কদর। আর এই মৌসুমে চাঁই ও নৌকা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন এ অঞ্চলের পরিবার।
মাদারীপুর সদর উপজেলার , কাঠপট্টি পুরান বাজার এলাকায় নৌকা তৈরি করা হয়। জ্যৈষ্ঠ থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত টেকের হাট হোসেনের হাট উতরাইল হাট শেকপুর ও পার্শ্ববর্তী কোটালীপাড়ার ঘাঘর, রামশীল হাটে বসে নৌকার হাট।
এসব অঞ্চলের মানুষের বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতের বাহন হচ্ছে নৌকা। হাট-বাজার থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজে আসার জন্য তাদের নৌকার ওপর নির্ভর করতে হয়। বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই উপজেলার বিভিন্ন স্থানে চলছে নৌকা বানানোর ধুম।
কাঠপট্টি পুরান বাজার কারিগররা নৌকা তৈরিতে এখন মহাব্যস্ত। দিনরাত এক করে নৌকা তৈরি করছেন তারা। সেই সঙ্গে চলছে পুরোনো নৌকা মেরামতের কাজ। নৌকা কারিগর শাহাআলম বলেন, ‘বর্ষা আসলেই নৌকার কদর বেড়ে যায়।
এই সময় আমার কারিগরেরা দম ফেলার সময় পাই না।’ উৎরাইল গ্রামের মতি হালদার বলেন, পারিবারিকভাবে আমরা কাঠমিস্ত্রির কাজ করি। এমনিতে নতুন টিনের ঘর তৈরি করি। তবে বছরে দুই মাস নৌকা বানাই। বর্ষাকালে ঘরের কাজ একটু কম থাকে তাই বিকল্প হিসেবে নৌকা বানাই। ঘরের কাজে আমাদের মজুরি ৬০০ টাকা আর একটা নৌকা বানাতে পারলে পাই ৮০০ টাকা। দুই দিনে ৩টা নৌকা বানানো সম্ভব।
নৌকা তৈরির কারিগর রাকিব জানান, তাঁরা গ্রাম এলাকা থেকে কাঠ কিনে এনে নৌকা তৈরি করে থাকেন। চম্বল কাঠ দিয়ে ডিঙি ও ছোট আকারের পিনিশ নৌকা তৈরি করা হয়। আর রেইনট্রি কাঠ দিয়ে তৈরি হয় কম দামি নৌকা।
নৌকার ক্রেতা রুবেল , ও জীবন জানান, শুধু বর্ষা মৌসুমে ব্যবহারের জন্য কম দামি নৌকা বেশি বিক্রি হয়ে থাকে। যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি এবং আগের মতো বর্ষা না হওয়ার কারণে দিন দিন নৌকার চাহিদা কমছে।
তবে বর্ষা মৌসুম জুড়ে নৌকার চাহিদা বাড়ে। আর বিল অঞ্চলের মানুষের বর্ষায় যাতায়াতের একমাত্র ভরসা হচ্ছে নৌকা। তাই বর্ষার আগেই কেউ কেউ নৌকা কিনে রাখছেন। বর্ষায় চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে দামও বেড়ে যায়।